হাড়ের ভেতর যে মজ্জা বা বোন ম্যারো রয়েছে তার থেকে তৈরি হয় রক্ত। সেখানকার কোষগুলো পরিণত হবার পর আমাদের রক্তে আসে। কোন কারণে যদি এই কোষগুলো পরিণত না হয় এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন অতিরিক্ত অপরিণত কোষ বোন ম্যারোর মধ্যে জমা হতে থাকে এবং তারা রক্তে আসে। এতে ফলে রক্তের স্বাভাবিক কোষ যেমন আরবিসি, ডাবলুবিসি ও প্লেটলেট কমে যায়। একেই সাধারণভাবে ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার বলা হয়। রেড ব্লাড সেলের কাজ হলো মূলত হিমোগ্লোবিন বহন করা এবং রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। হোয়াইট ব্লাড সেলের কাজ হলো শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। আর প্লেটলেটের কাজ হলো রক্তপাত বন্ধ করা। যেহেতু এই কার্যকরী কোষগুলো কিছু অস্বাভাবিক ক্যানসার কোষের জন্য কাজ করতে পারে না ফলে যেগুলো ঘটে তা হলো হিমোগ্লোবিন কমে গিয়ে এনিমিয়া, ক্লান্তি বোধ, সংক্রমণ ও জ্বর, সামান্য সর্দি কাশিও সারতে না চাওয়া, শরীরের নানা জায়গা দিয়ে রক্তপাত বা কালশিটে পড়ে যাওয়া। প্রথম অবস্থায় সাধারণ ডাক্তাররা এনিমিয়ার ওষুধ দেবেন। কিন্তু তাতে যদি না সারে, এবং সঙ্গে এই সমস্ত উপসর্গ দেখা দেয় তখন ডাক্তারের সন্দেহ করা উচিত এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছে পাঠানো উচিত। ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ার জন্য যে পরীক্ষা করা হয় তার নাম বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জার পরীক্ষা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন ওষুধ খেলেও কমতে পারে, তেমন কোন কোন ক্ষেত্রে কেমো দিয়েও যদি প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হতেও পারে। নারায়ণা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ব্লাড ক্যানসারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্লাড ক্যানসারের কিছু ধরণ রয়েছে। সবকটি সমান ভয়াবহ নয়। সময়ে চিকিৎসা করলে সত্তর থেকে আশি শতাংশ ব্লাড ক্যানসার সারতে পারে। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে হয়তো কিছু করার থাকে না। ব্লাড ক্যানসার এমন এক ধরণের ক্যানসার যা চিকিৎসা না করালে যেমন রোগীর মৃত্যু অবধারিত, তেমনই সঠিক চিকিৎসা করলে তা সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। সমস্তরকমের ব্লাড ক্যানসার এখানে চিকিৎসা করিয়ে সারানো সম্ভব, এবং এই সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা এখন এ দেশেই পাওয়া যায়। তাই বিদেশে না গেলে ব্লাড ক্যানসার সারবে না এ ধারণা একেবারেই ভুল।
ডঃ রাজীব দে | কনসালট্যান্ট হেমাটোলজি এন্ড হেমাটো অঙ্কোলজি | নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল, হাওড়া