শিশুদের মধ্যে পরিলক্ষিত আরও একটি জন্মগত হার্টের সমস্যা হল সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ। এক্ষেত্রে হার্টের গঠনগত জটিল সমস্যার জন্যে শরীরের শুদ্ধ লাল রক্ত এবং অশুদ্ধ নীল রক্ত একসঙ্গে মিশে যায়। তার ফলে বাচ্চাটির ঠোঁট, জিভ এবং ত্বকে নীলচে ভাব দেখা দিতে পারে। এই নীলচে ভাব সবথেকে বেশি বোঝা যায়, বাচ্চাটি যখন কান্নাকাটি করে। তাছাড়া একটু বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে যখন সে খেলাধূলা করে তখন সবথেকে বেশি নজরে আসে। যদি কোনও বাচ্চার সায়ানোটিক কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ থাকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। অনেকসময় এইসব রোগীদের একাধিক সার্জারির দরকার হতে পারে। কোন ধরনের এবং কোন বয়সে, কতবার সার্জারি করা প্রয়োজন এগুলি একজন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট বিস্তারিতভাবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে তবে সিদ্ধান্ত নেন। অনেকসময় যথাযথ সার্জারি পরিকল্পনার আগে সি টি অ্যাঞ্জিও বা কার্ডিয়াক অ্যাঞ্জিওগ্রাফির সাহায্য নিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, হার্টের অপারেশনের সাফল্য ‘টিম ওয়ার্ক’ -এর উপর নির্ভরশীল। যে টিমে একজন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জেন (শিশুর হার্ট অপারেশনে বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন), কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেসিস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কার্ডিয়াক ইনটেনসিভিস্ট, কারণ জটিল অপারেশনের পরের সাফল্য নির্ভর করে পোস্ট সার্জিক্যাল কেয়ারের উপর। তাই সার্জিক্যাল টিমের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত হাসপাতাল হওয়ারও অত্যন্ত প্রয়োজন। যেখানে অভিজ্ঞ নার্সিং স্টাফেরা শিশুটির দেখাশোনা করতে পারবেন।
সর্বোপরি বলা যায়, যদি দেখেন আপনার বাচ্চা সর্দি-কাশিতে ঘনঘন ভুগছে, ওজন ঠিকমত বাড়ছে না, খেতে গেলে অস্বাভাবিক রকমের ঘামছে এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাচ্চাটির হার্ট থেকে একটি অতিরিক্ত ধ্বনি আসছে বা শিশু নীলচে হয়ে যাচ্ছে, তখন যত দ্রুত সম্ভব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করা প্রয়োজন।
ডাঃ মহুয়া রায় | কনসালটেন্ট – পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট | রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস, কলকাতা