1. ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গে কতজন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত?
ভারতে ক্যান্সারে মৃত্যুহার ক্রমশঃ ঊর্ধ্বগামী। কিন্তু যথাযথ নথিকরণের অভাবে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। ২০০৩-২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গে জনগণভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা যায়, ফুসফুসের ক্যান্সার সবরকম ক্যানসারের প্রায় ২৩ শতাংশ দখল করে আছে।
GLOBACON ২০২০ এর তথ্য অনুযায়ী, ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত জনসংখ্যার প্রতি ১০১ জনে ১ জন মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই ক্যানসারের ঝুঁকি ক্রমশঃ বাড়ে, পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ৬৮ জনে ১ জন, মহিলার ক্ষেত্রে প্রতি ২০১ জনে ১ জন।
2. ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?
ধূমপান ও বায়ু দূষণ ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলেও এর সঙ্গে পেশাগত কারণে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক, যেমন, আর্সেনিক, নিকেল, সিলিকা ইত্যাদির সংস্পর্শে আসাও উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
3. লক্ষণগুলি কী কী?
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দেয় না। সাধারণতঃ যখন রোগ অগ্রসর হয়ে চরম পর্যায়ে উপনীত হয়, তখনই প্রথম উপসর্গ দেখা দেয়, যথা –
(১) ক্রমাগত কাশি
(২) শ্বাসকষ্ট
(৩) কফ ওঠা, রক্ত ছাড়া বা রক্ত সহ
(৪) বুকে ব্যথা
(৫) ওজন হ্রাস
(৬) কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া ইত্যাদি।
4. কীভাবে তাড়াতাড়ি ফুসফুসের ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়?
যে সব রোগীর এই সমস্ত উপসর্গের সঙ্গে পূর্ব বর্ণিত ঝুঁকির কারণগুলি বর্তমান, তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
যদি রোগের ইতিহাস ও উপসর্গ ফুসফুসের ক্যান্সার নির্দেশ করে, রোগীর বুকের এক্সরে ও সিটি স্ক্যান দ্বারা প্রাথমিক নিরীক্ষণ করা হয়।
5. এটি কীভাবে নির্ণয় করা যায়?
চূড়ান্ত রোগনির্ণয় করতে হলে, তা কেবল মাত্র PET -CT scan এবং CT বা ব্রঙ্কোস্কোপি গাইডেড ট্রুকাট বায়োপসি দ্বারাই করা সম্ভব।
6. ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারগুলি কী কী?
ফুসফুসের ক্যান্সার তিন ধরনের হয় – নন স্মল সেল টাইপ, স্মল সেল টাইপ এবং কার্সিনয়ড। এর মধ্যে স্মল সেল টাইপ সবচেয়ে খারাপ, বৃদ্ধি পায় ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত।
7. ফুসফুসের ক্যান্সারে কি অস্ত্রোপচার সম্ভব?
হ্যাঁ এটিকে সারিয়ে ফেলা যায় এবং এটি অন্যতম সেরা চিকিত্সা – যদি সবচেয়ে সেরা না হয়।
সাধারণত ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে একধরনের ভ্রান্তিমূলক ভাবনা কাজ করে যে ফুসফুস শ্বাস নেওয়া ও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য হওয়ায় অসুস্থ ফুসফুসের অস্ত্রোপচার করলে সেই মানুষের পক্ষে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
বহু আন্তর্জাতিক গবেষণা এবং কমিটির সুপারিশ দ্বারা এই বহুলপ্রচারিত ভুল বোঝাপড়াটিকে খণ্ডন করা হয়েছে।
8. কোন পর্যায় পর্যন্ত এটি সার্জিকালি সারিয়ে ফেলা যায়?
রোগের পর্যায়কে স্টেজ ওয়ান থেকে স্টেজ ফোর অবধি ভাগ করা হয়।
এর মধ্যে নন স্মল সেল টাইপ ও কার্সিনয়ড ক্যানসারের স্টেজ থ্রি- এ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার দ্বারা নিরাময় সম্ভব হতে পারে।
স্মল সেল টাইপ ক্যানসারে কিন্তু কেবল স্টেজ টু – এ পর্যন্তই অস্ত্রোপচার দ্বারা নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে।
9. কোন রোগী ফুসফুসের ক্যান্সারের শল্য চিকিত্সার পরেও সক্রিয় থাকবে?
বাস্তবে দেখা যায় যে, যদি অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী কিছু পরীক্ষায় রোগী উপযুক্ত বিবেচিত হন, তবে রোগসংক্রমন বিচার করে ফুসফুসের অংশবিশেষ, এমনকি একদিকের সম্পূর্ণ ফুসফুস ও বাদ দেওয়া সম্ভব। সেই রোগী অস্ত্রোপচারের পর আগের মতই কায়িক শ্রম সহ্য করার অবস্থায় থাকেন, সর্বোপরি রোগ হীন সুস্থতর জীবন যাপন করতে পারেন।
10. ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার সিদ্ধান্ত কিভাবে নেওয়া হয়?
প্রতিটি রোগীকে তার রোগলক্ষণ ও রোগের পর্যায় অনুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে একটি multidisciplinary board, অর্থাৎ বহুবিভাগীয় পরিষদ গঠিত হয়েছে, এই ধরনের রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আছে, এমন থোরাসিক সার্জেন, পালমনোলজিস্ট, মেডিকেল ও রেডিয়েশন অঙ্কলজিস্ট এবং রেডিয়লজিস্ট – এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে।
এইধরনের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বোর্ড দ্বারা চিকিৎসা কেবল আন্তর্জাতিকভাবে প্রস্তাবিত পদ্ধতিই নয়, এর দ্বারা প্রতিটি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সক্রিয় মতামত পাওয়া সম্ভব হয়, যা কেবল একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়
11. ফুসফুসের ক্যান্সারে কি “ মিনিমাল অ্যাকসেস সার্জারি” অর্থাৎ ছোট করে কেটে অস্ত্রপচার সম্ভব?
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ প্রচেষ্টার আগেকার ২৫-৩০ সেন্টিমিটার ক্ষত কমিয়ে এনে ৫ সেন্টিমিটার “মিনিমাল অ্যাকসেস সার্জারি”তে পৌঁছেছে। ক্যান্সার নির্মূল করার ক্ষেত্রে এই নতুন পদ্ধতি পুরনো পদ্ধতির সমতুল্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার- পরবর্তী যন্ত্রণা, অস্বস্তি কম, হাসপাতালে থাকতে হয় কম সময় এবং স্বাভাবিক কর্মক্ষম জীবনে ফেরাও যায় তাড়াতাড়ি।
12. আমাদের টিম কিভাবে কাজ করে?
মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বোর্ড দ্বারা নির্ধরিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিনিমাল অ্যাকসেস সার্জারি অথবা ভিডিও অ্যাসিস্টেড থোরাকোস্কোপিক সার্জারি অর্থাৎ ছোট করে কেটে অস্ত্রপচার ও অস্ত্রোপচার- পরবর্তী চিকিৎসা ও সহায়তা, যা কিনা এই মুহূর্তে সমস্ত দেশে আন্তর্জাতিকভাবে প্রস্তাবিত পদ্ধতি, তা ই করা হয়।
প্রফে ডাঃ আমিতাভ চক্রবর্তী | ডাঃ মনুজেস বন্দ্যোপাধ্যায় | কনসালটেন্ট জেনারেল থোরাসিক, থোরাকোস্কোপিক অনকোসার্জেন ও ভাস্কুলার সার্জেন | নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল, হাওড়া