গাইনোকোলজিক অঙ্কোলজি বলতে বোঝায় স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত অঙ্গের ক্যানসার। এর মধ্যে পড়ে ইউটেরাস, ওভারি এবং সার্ভিকস বা জরায়ুর মুখ এবং ভালভা। ভারতীয় ক্ষেত্রে সারভাইকাল বা জরায়ুমুখ ক্যানসার সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে সারভাইকাল ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। তবে ওভারিয়ান ক্যানসার সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজের আগে ধরা পড়ে না। তাই এই ক্যানসার অনেক বেশি আক্রমণাত্মক বলা চলে। তুলনায় সারভাইকাল ক্যানসারে রোগী অনেক তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন। সারভাইকাল ক্যানসারের মূল কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস যা যৌন সহবাসের ফলে মহিলাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটা কোন অস্বাভাবিক ভাইরাস নয়। কিন্তু কোনরকম ফাংগাল ইনফেকশনের সংস্পর্শে এলে বা ডায়বেটিস কিংবা অন্য কোন অসুস্থতা থেকে থাকলে দশ পনেরো বছর ধরে এই ভাইরাস যদি শরীরে থেকে যায় তাহলে তার থেকে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। পিরিয়ডসের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, সহবাসের পরে রক্তপাত, অতিরিক্ত সাদা স্রাবের সমস্যা বা ইউরিনারী কোন সমস্যা সাধারণভাবে সারভাইকাল ক্যানসারের লক্ষণ। এক্ষেত্রে সাধারণ ওষুধে সমস্যা না কমলে গাইনোকোলজিক অঙ্কোলজিস্টকে দিয়ে পরীক্ষা করানো দরকার। ওভারিয়ান ক্যানসারের ক্ষেত্রে খাওয়ার ইচ্ছে চলে যাওয়া, খিদে না হওয়া, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়াকে লক্ষণ বলা যেতে পারে। এছাড়া পেটে জল জমাও একটা লক্ষণ। সাধারণত পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছর বয়সে যেহেতু ওভারিয়ান ক্যানসার হয়ে থাকে তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই ভেবে নেন মেদের কারণে পেট বেড়ে গেছে। কিন্তু পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় পেতে জল জমছে এবং সেই জলে ক্যানসার সেল পাওয়া যায়। ওভারিয়ান ক্যানসার বোঝার জন্য আল্ট্রা সাউন্ড করিয়ে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তবুও সবক্ষেত্রে ধরা পড়ে না। সারভাইকাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্যাপস্মিয়ার বা ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে ম্যামোগ্রাফির মাধ্যমে আগে থেকে বোঝা সম্ভব। সারভাইকাল ক্যানসার অনেকটা সময় দেয়। তাই সেক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার বিয়ের বা প্রথম সহবাসের পরে তিনবছর অন্তর একবার প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করানো উচিত। এখন অনেকেই নিজে থেকে এই পরীক্ষা করিয়ে আসেন। তাই সচেতনতা বাড়ছে এটা বলা যায়। তবে হাই প্রোফাইল গ্রুপে এই সচেতনতা বা শিক্ষা দেখা গেলেও গ্রামেগঞ্জে অনেকে বুঝতে চান না। বর্তমানে সেলফ ডিটেকশন কিট দিয়ে তাদের বলা হচ্ছে নিজেই নিজের টেস্ট করতে। এটার ফলে অনেকটা সাড়া পাওয়া গেছে। নারায়ণা হাসপাতালে গাইনোকোলজিক অঙ্কোলজি বিভাগে বিশ্বমানের চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। এই রাজ্যের অন্যান্য সমস্ত ক্যানসার হাসপাতাল থেকে রোগীদের এখানে রেফার করা হয়। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে আমরা যেভাবে চিকিৎসা করে থাকি তা বাইরের অন্যান্য সমস্ত হাসপাতালের সঙ্গে সমতুল্য।
ডঃ কৌস্তভ বাসু | কনসল্যান্ট গাইনি অঙ্কোসার্জন | নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল, হাওড়া