অর্থো অঙ্কোলজি বলতে হাড়, মাংসপেশী, হাড়ের চারপাশে যে ফ্যাট ও টিস্যু থাকে তার ক্যানসারকে বোঝানো হয়। এই ক্যানসার দুধরনের হয়। প্রথম প্রাইমারি বোন ক্যানসার। এক্ষেত্রে অরিজিন অফ ক্যানসার হলো বোন ও সফট টিস্যু। আর দ্বিতীয়টি হলো অন্য কোন অঙ্গে যদি ম্যালিগন্যান্সি থেকে থাকে যেমন প্রস্টেট ক্যানসার বা মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসার, সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে হাড়ে সেই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রথম ধরণকে বিরল প্রজাতির ক্যানসার বলে ধরা হয়। হাড়ের ক্যানসারের প্রথম লক্ষণই হলো জয়েন্টের ব্যথা। তবে ব্যথা মানেই যে তা ক্যানসারের কারণ হবে এমন নয়। যেমন হার্ট এটাকের ক্ষেত্রে আগে থেকে সাবধান হওয়া যায় না, তেমনই হাড়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও সাবধান হবার সুযোগ পাওয়া যায় না। এর প্রাথমিক কারণ হলো সচেতনতার অভাব। শুধু সাধারণ মানুষ নয় অনেক ক্ষেত্রে মেডিসিনের পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষরাও এই সম্পর্কে সতর্ক হন না। কোনরকম ব্যথা যা হয়তো অনেকদিন ধরে চলছে অনেকে না জেনেই স্পন্ডিলাইসিস বা ফ্রোজেন শোল্ডার কিংবা ব্যথার ওষুধ খেয়ে নেন। অনেকরকম ভুল ধারণা ও কুসংস্কারও জড়িয়ে রয়েছে ব্যথার সঙ্গে। এসব করতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রেই সঠিক পদক্ষেপ নিতে দেরী হয়ে যায়। তবু শহরাঞ্চলে হয়তো কিছুটা সময় নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে আসল রোগ নির্ধারণ হতেই এত সময় চলে যায় হয়তো আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। তবে যেমন ধূমপান বা এলকোহলের সঙ্গে গলা বা ফুসফুসের ক্যানসারের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে সেভাবে হাড়ের ক্যানসারকে কোনকিছুর সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। কিসের থেকে হয় তাও জানা সম্ভব নয়। তবে কম বয়সে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে হাড়ের ক্যানসার হতে পারে। সাধারণ ওষুধ খেয়ে ব্যথা না সারলে তখন অন্য চিকিৎসার কথা ভাবা দরকার। মাসের পর মাস ধরে গরম ঠান্ডা সেঁক দিয়ে ব্যথাকে পুষে রাখা ঠিক নয়। নারায়ণা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ২০১৫ তে আমরা জয়েন করি মুম্বই থেকে এসে। তারপর থেকে এখানে ডেডিকেটেড অর্থোপেডিক অঙ্কোলজির চিকিৎসা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে আমরা করে আসছি। তিরিশ চল্লিশ বছর আগে এই ধরণের ক্যানসারে হাত বা পা কেটে বাদ দিতে হতো। এখন খুব কম ক্ষেত্রেই সেটা করতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
ডঃ কৌশিক নন্দী | কনসালট্যান্ট – অনকোলজি, অর্থো – অনকোলজি | নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল, হাওড়া